হুপিং কাশি
হুপিং কাশি | |
---|---|
বিশেষত্ব | সংক্রামক ব্যাধি |
হুপিং কাশি (ইংরেজি: Whooping cough বা Pertussis) হচ্ছে একটি অত্যন্ত ছোঁয়াচে ব্যাক্টেরিয়াঘটিত রোগ।[১][২] এটার অপর নাম পারটুসিস বা বাংলায় ঘুংড়ি কাশি। এই রোগের প্রাথমিক দিকে ঠাণ্ডা লাগার মত জ্বর, সর্দি, হালকা কাশি হতে পারে। ধীর ধীরে কাশির তীব্রতা বাড়তে থাকে এবং কয়েক সপ্তাহ থেকে কয়েক মাস পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে, এজন্য এই কাশিকে একশো দিনের কাশি বলে আখ্যায়িত করা হয়। [৩] হুপিং কাশির তীব্রতা এত বেশি যে রোগী কাশতে কাশতে প্রচণ্ড ক্লান্ত হয়ে পড়ে, বমি করে ফেলতে পারে এমনকি পর্শুকা বা বক্ষপিঞ্জরের অস্থি ভেঙে যেতে পারে। [২][৪] এক বছরের নিচের শিশুদের কাশির তীব্রতা এত বেশি থাকেনা বা কাশি নাও হতে পারে তবে শ্বাস - প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যেতে পারে।[২] এই ব্যাক্টেরিয়া দ্বারা সংক্রমিত হওয়ার পর রোগ আরম্ভ হতে আট থেকে দশ দিন সময় লাগতে পারে।[৫] যারা এই রোগের টিকা নিয়েছে তাদের ক্ষেত্রেও এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা আছে তবে রোগের তীব্রতা অনেক হালকা হয়ে থাকে।[২]
কারণ
[সম্পাদনা]Bordetella pertussis (বর্ডেটেলা পারটুসিস) নামক ব্যাক্টেরিয়া হুপিং কাশির জন্য দায়ী।[৬] এটি একটি বায়ু বাহিত রোগ যা আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি বা কাশির মাধ্যমে ছড়াতে পারে।[৬][৭] রোগের লক্ষণ দেখা দেওয়ার পর থেকে শুরু করে প্রায় তিন সপ্তাহ পর্যন্ত রোগীর কাছ থেকে সুস্থ মানুষে এই রোগ ছড়াতে পারে। তবে অ্যান্টিবায়োটিক শুরুর পাঁচ দিন পর থেকে ছড়ানোর সম্ভাবনা হ্রাস পায়।[৮] Bordetella parapertussis নামক জীবাণু দ্বারা একই রকম কিন্তু অল্প তীব্রতার রোগ হতে পারে।[৯] ১৯০৬ সালে Jules Bordet এবং Octave Gengou দুইজনে মিলে এই রোগের জীবাণু আবিষ্কার করেন।[১০]
উপসর্গসমূহ
[সম্পাদনা]তীব্র কাশি, শ্বাস গ্রহণের সময় হুপিং শব্দ, কাশির পরে বমি হওয়া বা মূর্ছা যাওয়া। [১১] এছাড়া তীব্র কাশির ফলে চোখের কনজাংটিভার নিচে রক্ত জমা, পর্শুকা ভেঙে যাওয়া, হার্নিয়া, মেরুদণ্ডীয় ধমনি ছিঁড়ে যাওয়া, প্রস্রাব আটকাতে অক্ষমতা প্রভৃতি সমস্যা হতে পারে।[১১] তীব্র কাশির ফলে প্লুরা বা ফুসফুসের আবরণী পর্দা ছিঁড়ে প্লুরা গহ্বরে বায়ু জমতে পারে (নিউমোথোরাক্স)।
সুপ্তাবস্থা
[সম্পাদনা]এই রোগের সুপ্তিকাল গড়ে ৯-১০ দিন(সীমা ৬-২০ দিন)[১২] কখনোকখনো ৪২ দিন পর্যন্ত হতে পারে।[১৩]
শনাক্তকরণ
[সম্পাদনা]রক্ত পরীক্ষায় লিম্ফোসাইটোসিস(লিম্ফোসাইটের আধিক্য) পাওয়া যায়। এছাড়া ন্যাজোফ্যারিঞ্জিয়াল সোয়াব নিয়ে ব্যাক্টেরিয়া কালচার, পলিমারেজ চেইন রিয়্যাকশন(PCR), ডিরেক্ট ফ্লুরোসেন্ট অ্যান্টিবডি (DFA), সেরোলজি যেমন কমপ্লিমেন্ট ফিক্সেশন টেস্ট(CFT) ইত্যাদি করা হয়।[১৪][১৫]
প্রতিরোধ
[সম্পাদনা]পারটুসিস প্রতিরোধের প্রাথমিক উপায় হলো টিকা।[১৬]
টিকা
[সম্পাদনা]পারটুসিস টিকা রোগ প্রতিরোধ করতে সক্ষম।[১৭] এবং WHO ও CDC কর্তৃক রুটিন মাফিক ব্যবহারের জন্য সুপারিশকৃত। [১৮][১৯] টিকা প্রদান সারাজীবনের জন্য রোগমুক্তি নিশ্চিত করেনা।২০১১ সালের CDC কর্তৃক গবেষণায় প্রতীয়মান হয় যে এটি শুধু ছয় থেকে নয় বছর প্রতিরক্ষা করতে পারে যে সময়টা শৈশবকালকে অন্তর্ভুক্ত করে। শৈশবকাল এই রোগে আক্রান্ত হবার ও মৃত্যুর সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি।[১১][২০] পারটুসিস টিকা দুই মাস বয়স থেকে ডিপথেরিয়া ও টিটেনাস টক্সোয়েড (ধনুষ্টঙ্কার) টিকার সাথে একত্রে দেয়া হয়। ১২-১৫ মাস বয়সে একটি ও বিদ্যালয়ে ভর্তির সময় আরেকটি বুস্টার ডোজ দেয়া হয়।[২১][২২]
চিকিৎসা
[সম্পাদনা]বিভিন্ন অ্যান্টিবায়োটিক যেমন ইরাইথ্রোমাইসিন, ক্ল্যারিথ্রোমাইসিন, এজিথ্রোমাইসিন প্রভৃতি ব্যবহৃত হয়। অ্যান্টিবায়োটিক যত দ্রুত শুরু করা যাবে রোগ তত দ্রুত সারবে।[১৬][২৩][২৪]
জটিলতা
[সম্পাদনা]কমন জটিলতার মধ্যে রয়েছে নিউমোনিয়া, ব্রংকাইটিস, কান ব্যথা, খিচুনি, এনসেফালোপ্যাথি ইত্যাদি।[২৫][২৬][২৭]
রোগতত্ত্ব
[সম্পাদনা]সারাবিশ্বে প্রতিবছর প্রায় ৪৮.৫ মিলিয়ন লোক হুপিং কাশিতে আক্রান্ত।[২৮][২৯] ২০১৩ সালের হিসাব অনুযায়ী উক্ত বছরে এই রোগে মৃতের সংখ্যা ছিলো ৬১,০০০ জন যেখানে ১৯৯০ সালে যা ছিলো ১,৩৮,০০০ জন।[৩০] অন্য একটি হিসাব অনুযায়ী প্রতিবছর হুপিং কাশিতে সারাবিশ্বে প্রায় ১,৯৫,০০০ জন শিশু মারা যায়।[৩১][৩২] এর ৯০ শতাংশই উন্নয়নশীল দেশগুলোতে ঘটে।[৩২][৩৩]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ Carbonetti NH (জুন ২০০৭)। "Immunomodulation in the pathogenesis of Bordetella pertussis infection and disease"। Curr Opin Pharmacol। 7 (3): 272–8। ডিওআই:10.1016/j.coph.2006.12.004। পিএমআইডি 17418639।
- ↑ ক খ গ ঘ "Pertussis (Whooping Cough) Signs & Symptoms"। মে ২২, ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫।
- ↑ "Pertussis (Whooping Cough) Fast Facts"। cdc.gov। ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫।
- ↑ "Pertussis (Whooping Cough) Complications"। cdc.gov। আগস্ট ২৮, ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫।
- ↑ Atkinson, William (মে ২০১২)। Pertussis Epidemiology and Prevention of Vaccine-Preventable Diseases (12th সংস্করণ)। Public Health Foundation। পৃষ্ঠা 215–230। আইএসবিএন 9780983263135।
- ↑ ক খ "Pertussis (Whooping Cough) Causes & Transmission"। cdc.gov। সেপ্টেম্বর ৪, ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫।
- ↑ "Pertussis"। WHO। সংগ্রহের তারিখ ২৩ মার্চ ২০১৬।
- ↑ "Pertussis (Whooping Cough) Treatment"। cdc.gov। আগস্ট ২৮, ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫।
- ↑ Finger H, von Koenig CH (১৯৯৬)। Baron S; ও অন্যান্য, সম্পাদকগণ। Bordetella–Clinical Manifestations. In: Barron's Medical Microbiology (4th সংস্করণ)। Univ of Texas Medical Branch। আইএসবিএন 0-9631172-1-1।
- ↑ Baker JP, Katz SL (২০০৪)। "Childhood vaccine development: an overview"। Pediatr. Res.। 55 (2): 347–56। ডিওআই:10.1203/01.PDR.0000106317.36875.6A। পিএমআইডি 14630981।
- ↑ ক খ গ Cornia PB, Hersh AL, Lipsky BA, Newman TB, Gonzales R (আগস্ট ২০১০)। "Does this coughing adolescent or adult patient have pertussis?"। JAMA। 304 (8): 890–6। ডিওআই:10.1001/jama.2010.1181। পিএমআইডি 20736473।
- ↑ Heymann, David L. (ed): Pertussis; in Control of Communicable Diseases Manual. p. 457. American Public Health Association, Washington DC, 2008, আইএসবিএন ৯৭৮-০-৮৭৫৫৩-১৮৯-২
- ↑ Pertussis (whooping cough), New York State Department of Health, Updated: January 2012, retrieved 8 June 2013.
- ↑ Pedro-Pons, Agustín (১৯৬৮)। Patología y Clínica Médicas (Spanish ভাষায়)। 6 (3rd সংস্করণ)। Barcelona: Salvat। পৃষ্ঠা 615। আইএসবিএন 84-345-1106-1।
- ↑ "Pertussis"। Euro Diagnostica। Euro Diagnostica AB। সংগ্রহের তারিখ ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬।
- ↑ ক খ Altunaiji S, Kukuruzovic R, Curtis N, Massie J (২০০৭-০৭-১৮)। "Antibiotics for whooping cough (pertussis)"। Cochrane database of systematic reviews (Online) (3): CD004404। ডিওআই:10.1002/14651858.CD004404.pub3। পিএমআইডি 17636756।
- ↑ Zhang, L; Prietsch, SO; Axelsson, I; Halperin, SA (সেপ্টে ১৭, ২০১৪)। "Acellular vaccines for preventing whooping cough in children."। The Cochrane database of systematic reviews। 9: CD001478। ডিওআই:10.1002/14651858.CD001478.pub6। পিএমআইডি 25228233।
- ↑ "Annex 6 whole cell pertussis" (পিডিএফ)। World Health Organization। সংগ্রহের তারিখ ৫ জুন ২০১১।
- ↑ "Pertussis: Summary of Vaccine Recommendations"। Centers for Disease Control and Prevention। সংগ্রহের তারিখ ৫ জুন ২০১১।
- ↑ Versteegh FG, Schellekens JF, Fleer A, Roord JJ (২০০৫)। "Pertussis: a concise historical review including diagnosis, incidence, clinical manifestations and the role of treatment and vaccination in management"। Rev Med Microbiol। 16 (3): 79–89। ডিওআই:10.1097/01.revmedmi.0000175933.85861.4e।
- ↑ "Revised guidance on the choice of pertussis vaccines: July 2014." (পিডিএফ)। Wkly Epidemiol Rec। 89 (30): 337–40। জুলাই ২০১৪। পিএমআইডি 25072068।
- ↑ "Pertussis vaccines: WHO position paper."। Wkly Epidemiol Rec.। 85 (40): 385–400। অক্টো ১, ২০১০। পিএমআইডি 20939150।
- ↑ Altunaiji, S; Kukuruzovic, R; Curtis, N; Massie, J (জুলাই ১৮, ২০০৭)। "Antibiotics for whooping cough (pertussis)."। The Cochrane database of systematic reviews (3): CD004404। ডিওআই:10.1002/14651858.CD004404.pub3। পিএমআইডি 17636756।
- ↑ Heininger U (ফেব্রুয়ারি ২০১০)। "Update on pertussis in children"। Expert review of anti-infective therapy। 8 (2): 163–73। ডিওআই:10.1586/eri.09.124। পিএমআইডি 20109046।
- ↑ "Pertussis: Complications"। Centers for Disease Control and Prevention। সংগ্রহের তারিখ ২৪ আগস্ট ২০১২।
- ↑ Carbonetti, Nicholas H (মার্চ ২০১০)। "Pertussis toxin and adenylate cyclase toxin: key virulence factors of Bordetella pertussis and cell biology tools"। Future Microbiol.। 5 (3): 455–469। ডিওআই:10.2217/fmb.09.133। পিএমআইডি 20210554। পিএমসি 2851156 ।
- ↑ Guinto-Ocampo H, McNeil BK, Aronoff SC (এপ্রিল ২৭, ২০১০)। "Pertussis: Follow-up"। Emedicine। WebMD। সংগ্রহের তারিখ সেপ্টেম্বর ২৯, ২০১০।
- ↑ Bettiol S, Wang K, Thompson MJ, Roberts NW, Perera R, Heneghan CJ, Harnden A (২০১২)। "Symptomatic treatment of the cough in whooping cough"। Cochrane Database Syst Rev। 5 (5): CD003257। ডিওআই:10.1002/14651858.CD003257.pub4। পিএমআইডি 22592689।
- ↑ [হালনাগাদ প্রয়োজন]
- ↑ GBD 2013 Mortality and Causes of Death, Collaborators (১৭ ডিসেম্বর ২০১৪)। "Global, regional, and national age-sex specific all-cause and cause-specific mortality for 240 causes of death, 1990-2013: a systematic analysis for the Global Burden of Disease Study 2013."। Lancet। 385 (9963): 117–71। ডিওআই:10.1016/S0140-6736(14)61682-2। পিএমআইডি 25530442। পিএমসি 4340604 ।
- ↑ "Pertussis | Whooping Cough | Cases in Other Countries | CDC"। www.cdc.gov। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-০৩-০১।
- ↑ ক খ "Pertussis in Other Countries"। Centers for Disease Control and Prevention (CDC)। সংগ্রহের তারিখ ২৭ মে ২০১৩।
- ↑ http://www.cdc.gov/pertussis/surv-reporting/cases-by-year.html
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]- Pertussis at Todar's Online Textbook of Bacteriology
- View personal stories of pertussis—ShotbyShot.org, California Immunization Coalition (CIC)
- Whooping cough information page—Symptoms, Causes, Treatment
- [১]—PBS NOVA – Vaccines: Calling The Shots