একসংকর জনন
একসংকর জনন (ইংরেজি: Monohybrid cross) বংশগতি বিদ্যার একটি সুপরিচিত অধ্যায়। একজোড়া বিপরীত চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন একই প্রজাতির দুটি জীবের মধ্যে সংকরায়ন ঘটানো হলে, তাকে একসংকর জনন বলে।[১][২] এটি ঘটানোর জন্য একজোড়া বিপরীত চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন একই প্রজাতির দুটি জীব নেওয়া হয়, যারা হোমোজাইগাস প্রকৃতির হয়।
উদাহরণ
[সম্পাদনা]উপরের ছবিতে লাল আর সাদা রং বিশিষ্ট দুটি জীবের মধ্যে সংকরায়ণ ঘটানো হয়েছে। এখানে লাল প্রকট বৈশিষ্ট্য ও সাদা প্রচ্ছন্ন বৈশিষ্ট্য।
- 1 দ্বারা জনিতৃ জনু (Parental generation বা P জনু) বোঝানো হয়েছে।
- 2 দ্বারা প্রথম অপত্য জনু (First filial generation বা F1 জনু) বোঝানো হয়েছে।
- 3 দ্বারা দ্বিতীয় অপত্য জনু (Second filial generation বা F2 জনু) বোঝানো হয়েছে।
P জনুর মধ্যে লাল বর্ণের জীবটির জিনোটাইপ RR ও সাদা বর্ণের জন্য WW। এখানে R প্রকট অ্যালিল ও W প্রচ্ছন্ন অ্যালিল। সংকরায়ণের ফলে উৎপন্ন প্রতিটি অপত্যতে (F1) RW জিনোটাইপে R প্রকট হওয়ার জন্য লাল রঙের প্রকাশ ঘটেছে।
আবার F1 জনুর দুটি অপত্যের মধ্যে সংকরায়ণ ঘটানোর ফলে F2 জনুতে জিনগত সমাহার অনুযায়ী ৭৫% লাল ও ২৫% সাদা রঙের জীব তৈরী হয়েছে।
ব্যবহার
[সম্পাদনা]এটি মূলত দুটি অ্যালিলের মধ্যে কোনটি প্রকট তা নির্ধারণে সাহায্য করে।
ফিনোটাইপ ও জিনোটাইপ
[সম্পাদনা]সংকরায়ণের পর জীবের বহিরাকৃতি বা বাইরে প্রকাশিত লক্ষণকে ফিনোটাইপ বলে। কিন্তু সংকরায়ণের পর জাইগোট এর মধ্যের উপাদান বা জিন ঘটিত লক্ষণ কে জিনোটাইপ বলা হয়। ফিনোটাইপ অনুপাত = ৩:১ এবং জিনোটাইপ অনুপাত = ১:২:১ [৩]
মেন্ডেলের পরীক্ষা
[সম্পাদনা]বিজ্ঞানী গ্রেগর জোহান মেন্ডেল মটর গাছ (Pisum sativum) নিয়ে গবেষণা করেন ও বহু বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে একসংকর জনন সম্পন্ন করেন। বৈশিষ্ট্যগুলি ছিল:
বৈশিষ্ট্য | প্রকট | প্রচ্ছন্ন |
---|---|---|
উচ্চতা | লম্বা | বেঁটে |
ফলের আকৃতি | নিটোল/পরিপুষ্ট | কুঞ্চিত |
ফলের রং | সবুজ | হলুদ |
ফুলের রং | বেগুনি | সাদা |
ফুলের অবস্থান | কাক্ষিক | অগ্রস্থ |
বীজের রং | হলুদ | সবুজ |
বীজের আকৃতি | গোলাকার | কুঞ্চিত |
এদের প্রত্যেকটিকে নিয়ে একসংকর জনন সম্পন্ন করা সম্ভব।
- P জনু
জনিতৃ জনুতে মেন্ডেল দুটি উদ্ভিদ নেন, যাদের একটির উচ্চতা অপরটির তুলনায় বেশি। দুটোই হোমোজাইগাস প্রকৃতির হবার জন্য লম্বা উদ্ভিদের জিনোটাইপ TT ও বেঁটে উদ্ভিদের জিনোটাইপ tt। ছক অনুসারে T (লম্বা) প্রকট ও t (বেঁটে) প্রচ্ছন্ন অ্যালিল। দুটির যেকোনো একটিকে স্ত্রী ও অপরটিকে পুংলিঙ্গের নেওয়া হল। এদের মধ্যে সংকরায়ণ ঘটানো হলে প্রথম অপত্য জনু সৃষ্টি হয়।
P জনুর গ্যামেট (লম্বা) P জনুর
গ্যামেট (বেঁটে) |
T | T |
---|---|---|
t | Tt | Tt |
t | Tt | Tt |
ফলাফল: ১০০% সংকর লম্বা |
- F1 জনু
প্রথম অপত্য জনুতে প্রতিটিই Tt (হেটেরোজাইগাস) হল। T প্রকট হবার জন্য প্রতিটিই লম্বা হল। এবার Tt প্রকৃতির দুটি বিপরীত লিঙ্গের উদ্ভিদ নিয়ে সংকরায়ণ করা হল। ফলাফল নীচের চেকার বোর্ডে দেখা যাবে:
F1 জনুর গ্যামেট F1 জনুর
গ্যামেট |
T | t |
---|---|---|
T | TT | Tt |
t | Tt | tt |
ফলাফল: ২৫% বিশুদ্ধ লম্বা ৫০% সংকর লম্বা ২৫% বিশুদ্ধ বেঁটে |
- F2 জনু
উপরের চেকার বোর্ড থেকেই বোঝা যাচ্ছে যে,
- ফিনোটাইপিক অনুপাত = লম্বা:বেঁটে = ৩:১
- জিনোটাইপিক অনুপাত = বিশুদ্ধ লম্বা:সংকর লম্বা:বিশুদ্ধ বেঁটে = ১:২:১
অন্যান্য ব্যবহার
[সম্পাদনা]ব্যতিক্রম
[সম্পাদনা]গুরুত্ব
[সম্পাদনা]মেন্ডেল এখান থেকে তার পৃথকভবনের সূত্র পান।
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ Solomon, Eldra Pearl; Linda R. Berg; Diana W. Martin (ফেব্রুয়ারি ২০০৪)। Biology। Cengage Learning। আইএসবিএন 978-0-534-49276-2।
- ↑ Campbell, Neil A. (২০০৬)। Biology: concepts & connections। Pearson/Benjamin Cummings। আইএসবিএন 978-0-8053-7160-4।
- ↑ মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান, দ্বিতীয় খণ্ড: তুষারকান্তি ষন্নিগ্রহী, শ্রীভূমি পাবলিশিং কোম্পানি, কলকাতা, বছর:১৯৮৬