বাতাসা
উৎপত্তিস্থল | বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ |
---|---|
পরিবেশন | স্বাভাবিক তাপমাত্রা |
প্রধান উপকরণ | চিনি , দুধ, খাওয়ার সোডা, জল |
ভিন্নতা | গুড়ের বাতাসা, চিনির বাতাসা |
বাতাসা বাংলাদেশ, ভারত এবং পাকিস্তানের একটি জনপ্রিয় মিষ্টিজাতীয় খাবার। এটি ময়দা, চিনি, এবং ঘি দিয়ে তৈরি করা হয়। বাতাসা তৈরির জন্য, প্রথমে ময়দা, চিনি এবং ঘি মিশিয়ে একটি নরম মণ্ড তৈরি করা হয়। এরপর, এই মণ্ড থেকে ছোট ছোট বল তৈরি করে গরম তেলে ভেজে নেওয়া হয়। ভাজা হয়ে গেলে, বাতাসাগুলো ঠান্ডা করে পরিবেশন করা হয়। বাতাসা বিভিন্ন আকারে এবং আকৃতিতে তৈরি করা যেতে পারে। বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গে হিন্দুরা বাতাসা পূজার প্রসাদ হিসাবে ব্যবহার করেন। অনেক হিন্দু মন্দিরে "হরির লুট" নামে বাতাসা মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার রীতি আছে।[১] একটি ছোট বাতাসায় ক্যালরির পরিমাণ প্রায় ১০০ শতাংশ থাকে। যাদের ডায়াবেটিস আছে তাদের বাতাসা এড়িয়ে চলা উচিত।[২] কদমা, বাতাসা, মুরলি কোথাও ‘সাজ খাবার’ আবার কোথাও ‘মিঠাই’ নামে পরিচিত। সারা বছরই এসবের চাহিদা থাকে। তবে ডিসেম্বর থেকে এপ্রিল-পাঁচ মাস গ্রামগঞ্জে বিভিন্ন মেলার সময় বাতাসার চাহিদা বাড়ে। বৈশাখ মাসে বাতাসার চাহিদা থাকে সবচেয়ে বেশি।[৩]
বাতাসার ধরণ
[সম্পাদনা]- চিনি বাতাসা: এটি সবচেয়ে সাধারণ ধরণের বাতাসা। এটি শুধুমাত্র চিনি দিয়ে তৈরি করা হয়।
- এলাচ বাতাসা: এতে এলাচ গুঁড়ো মিশিয়ে তৈরি করা হয়।
- পেস্তা বাতাসা: এতে পেস্তা গুঁড়ো মিশিয়ে তৈরি করা হয়।
- কাঁঠাল বাতাসা: এতে কাঁঠালের টুকরা মিশিয়ে তৈরি করা হয়।
- নারকেল বাতাসা: এতে নারকেলের গুঁড়ো মিশিয়ে তৈরি করা হয়।
উপকরণ
[সম্পাদনা]- চিনি
- দুধ
- খাবার সোডা
প্রস্তুত প্রণালী
[সম্পাদনা]কড়াইতে চিনি অথবা গুড়, জল একসঙ্গে ফোটাতে হবে। ফুটে উঠলে দুধ দিয়ে ফেনার মতো ময়লা পরিষ্কার করে খাবার সোডা দেওয়া হয়। ঘন ঘন হলে গোল চামচের এক চামচ করে বাঁশের ডালায় ফেলে ঠান্ডা করে জমিয়ে নিয়ে বাতাসা তৈরী করা হয়।[৪]
ব্যবহার
[সম্পাদনা]সাধারণত পৌষ সংক্রান্তিতে কদমা, বাতাসা, তিলের খাজা বেশি খাওয়া হয়। মেলা, রথ প্রভৃতিতে বাতাসা অবিচ্ছেদ্য অনুষঙ্গ। লক্ষ্মীপূজাতেও এর ব্যবহার আছে।[৫]
সমস্যা
[সম্পাদনা]বাঙালির অতিথি আপ্যায়নে বাতাসার ব্যবহারের রীতি বেশ পুরনো। বিভিন্ন লেখকের গল্পে লেখায় এর পরিচয় পাওয়া যায়। পশ্চিমবঙ্গে প্রায় ২৫০০ কদমা বাতাসা ও নকুলদানা তৈরির ছোট ‘কারখানা’ রয়েছে। বর্ধমানের নীলপুর, মালদার হরিশ্চন্দ্রপুর, গড়িয়া-বেলেঘাটা, উত্তরবঙ্গের বালুরঘাটে প্রচুর কারিগর বাতাসা-নকুলদানা তৈরির সঙ্গে যুক্ত। ভাল চাহিদা থাকা সত্বেও বাতাসা-নকুলদানা-কদমাকে তেমন ভাবে বাজারজাত করায় সমস্যা আছে। তবে এই প্রাচীন কুটির শিল্পের হাল ফেরাতে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার আসরে নেমেছে। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার ক্লাস্টার তৈরি-করে রপ্তানি করার বিভিন্ন পদক্ষেপ করার পরিকল্পনা নিয়েছে।[৬]
পরিকল্পনা
[সম্পাদনা]পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যসরকারের খাদি গ্রামদ্যোগের উদ্যোগে ক্লাস্টার তৈরি করে কারিগরদের এক ছাদের তলায় এনে প্রথমে ছোটছোট ‘হাব’ তৈরি করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। সেখানেই আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে কারিগরদের। উদ্যোক্তাদের অভিমত, ওড়িশা, উত্তরপ্রদেশে বাতাসা কদমা এবং দেশের দক্ষিণের রাজ্যগুলিতে নকুলদানার চাহিদা রয়েছে। হাবে তৈরি হওয়া কদমা নকুললদানা বাতাসা আধুনিক প্রযুক্তিতে প্যাকেটজাত করে রপ্তানি করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ফলত কারিগর ও ব্যবসায়ী, উভয় পক্ষই লাভবান হবেন বলে মনে করছেন খাদি গ্রামোদ্যোগের কর্তারা।[৬]
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ "বাতাসা"। www.kalerkantho.com। অক্টোবর ২০২৩। সংগ্রহের তারিখ ১১ মে ২০২৪।
- ↑ প্রতিবেদক, নিজস্ব (১২ এপ্রিল ২০১৭)। "কোনটি খাবেন, মুড়ি নাকি বাতাসা?"। দৈনিক প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ১১ মে ২০২৪।
- ↑ প্রতিবেদক, নিজস্ব (১৪ এপ্রিল ২০১৮)। "কদমা-বাতাসার দিন ফিরছে"। দৈনিক প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ১১ মে ২০২৪।
- ↑ "রেসিপি: বাতাসা বানাবেন যেভাবে"। Bangla Tribune। সংগ্রহের তারিখ ১১ মে ২০২৪।
- ↑ ২৪ ঘণ্টা (৭ অক্টোবর ২০১৪)। "লক্ষ্মীপুজো স্পেশাল: ক্ষীরকদম"।
- ↑ ক খ আনন্দবাজার (১৫ আগস্ট ২০১৬)। "কদমা, বাতাসা শিল্পের দিন ফেরাতে ক্লাস্টারের ভাবনা"।